Dainik Sotter Kontho- দৈনিক সত্যের কণ্ঠ
Dainik Sotter Kontho - দৈনিক সত্যের কণ্ঠ
ঢাকাMonday , 19 June 2023
  • অন্যান্য

কোরবানিকে সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়েছে সাপাহারের কামারদের

মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য পশু কোরবানির মধ্যে দিয়ে পালিত হয় পবিত্র ঈদুল আজহা । আর মাত্র কয়েকদিন পরেই ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে । মুসলিম উম্মাহর মাঝে যা কোরবানির ঈদ বলে পরিচিত । ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা প্রিয় পশুটি জবেহ করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য অপেক্ষমান । এই কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে নওগাঁর সাপাহারে মাংস কাটার সরঞ্জাম বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা । দা, বটি, হাসুয়া, চাপাতি, ছুরি সহ নানাবিধ সরঞ্জাম তৈরী করছেন কামাররা । টুং- টাং শব্দে মুখরিত কামারশালাগুলো । কিছু সরঞ্জাম নতুন বানাচ্ছেন আবার পুরাতন গুলো শান দিচ্ছেন তারা । যেন কোরবানির আমেজে মেতে উঠেছে কামারশালাগুলো ।
বছরের অন্যান্য দিন গুলোতে তেমন কাজ হাতে থাকেনা কামারশালায় ।

 

সেসময়গুলোতে অলস সময় পার করলেও কোরবানির ঈদে যেন ব্যস্ততা চতুর্গুণ বেড়ে যায় । কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলে কর্মব্যস্ততা । বেড়ে যায় তৈরীকৃত জিনিসগুলোর দাম । বছরের এই সময়টিতে তাদের লাভও বেড়ে যায় অনেকাংশে । যার ফলে সময় নষ্ট করতে নারাজ কামাররা । এই ব্যস্তমুখর সময় চলে ঈদের আগের রাত পর্যন্ত । তবে কয়লা, লোহা সহ পারিশ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি হবার ফলে আগের মতো লাভ নেই বলে জানান কামাররা । তবে পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতেও যেন বদ্ধপরিকর তারা । যার ফলে কোরবানির ঈদে ব্যস্ততার মাঝে ডুবে থাকেন তারা ।

একসময় সকালে ঘুম থেকে উঠলেই কামারপড়ায় শোনা যেত কামারশালার টুং- টাং শব্দ । বর্তমানে অনেকাংশে কম শোনা যায় । বর্তমানে আধুনিকায়ন হবার ফলে রেডিমেড জিনিসপত্রের কদর বেড়েছে । যার ফলে তৈরীকৃত জিনিপত্রের চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে বলে দাবি করছেন স্থানীয় কামারেরা ।

সাপাহার উপজেলার বেশ কয়েকজন কামারের সাথে কথা হলে তারা বলেন, “ বর্তমান সময়ে সারাবছর ব্যবসায় মন্দা চলে । তবে এই উপজেলার কৃষিপণ্য যেমন ধান, গম, পাট, কালাই ইত্যাদি হারভেস্ট করার জন্য কাস্তে ব্যবহার করা হয় । যে কারনে সেসব মৌসুমে কিছুটা ব্যবসা চললেও তা দিয়ে তেমন লাভ হয় না । আমরা এই কোরবানীর সময়ের অপেক্ষায় থাকি । কিন্তু এই সময়টাও রেডিমেড জিনিসপত্র বাজারে আসার ফলে আগের মতো মুনাফা হয় না । এই কারণে অনেকেই পেশা বদলিয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছে । ”
উপজেলার থানা রোডে কর্মরত সুকুমার কর্মকার বলেন, “ এখানে ছোট্ট একটি জায়গা নিয়ে কর্মকার ব্যবসা চালাই । উপজেলা সদরে প্রতি সপ্তাহে শনিবারে একটি হাট বসে । পূর্বে ইরি ও আমন মৌসুমে এই এলাকায় ধান কাটার জন্য কাস্তে ও আষাঢ় শ্রাবণ মাসে পাট কাটার জন্য বড় বড় হাসুয়া তৈরির বায়না পেতাম । এখন হাটে বাজারে লোকের তেমন সমাগম নেই । ”

বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে প্রতিটি দা তৈরিতে প্রকারভেদে মজুরি নেওয়া হচ্ছে ২শ ’ থেকে ৪শ ’ টাকা পর্যন্ত । চাকু তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ১শ ’ টাকা । বড় ছুড়ি তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ৪- ৫শ ’ টাকা । বটি তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে দেড়শ টাকা থেকে আড়াইশ টাকা ।

স্থানীয় ক্রেতারা বলেন “ আর মাত্র কয়েক দিন পরেই ঈদ । গরু ও ছাগল জবাই দিতে এবং মাংস কাটতে দা, বটি, চাকু ও ছুরির প্রয়োজন । এজন্য বাজারে দা, বটি ও ছুরি কিনতে এসেছি । তবে গতবছরে এসব জিনিসের দাম খানিকটা বেশি । ”

লোহার তৈরী জিনিপত্র পাইকারী বিক্রেতারা বলেন, “ সারাবছরই তারা দা, বটি, চাকু, ছুরি বিক্রি করি । তবে কোরবানির মৌসুমেই এসব সরঞ্জামের কেনা- বেচার ধুম পড়ে । এবারও ভালো বিক্রি হচ্ছে । তবে কয়লা ও লোহার দাম বেড়ে যাওয়ায় কামারদের কাছ থেকে বেশি দামে এসব জিনিসপত্র কিনতে হচ্ছে । যার ফলে কিছুটা বেশি দামে আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে । ”

error: Content is protected !!