Dainik Sotter Kontho- দৈনিক সত্যের কণ্ঠ
Dainik Sotter Kontho - দৈনিক সত্যের কণ্ঠ
ঢাকাSunday , 22 October 2023
  • অন্যান্য

সবজির বাজারে আগুন, অসন্তোষ ক্রেতাদের

বাগেরহাট সংবাদদাতা
October 22, 2023 3:04 am । ১৩৫ জন

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের পাশাপাশি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে সবজির দাম বৃদ্ধি হওয়ায় হতাশ ভোক্তারা।

গত এক সপ্তাহে সব ধরনের সবজির দামও কেজিতে বেড়েছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা। সাধ্যের মধ্যে সবজি কিনতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন।ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে শীতের সবজি না আসায় দাম তুলনামূলকভাবে একটু বেশি। তবে শীতকালীন সবজি বাজারে উঠলে দামও কমে যাবে।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দিনের পর দিন কাঁচামাল সিন্ডিকেটের অবৈধ কারবার চলছে। তাই এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকরী তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

চড়া দামে আলু ও  পেয়াজ…

 

ক্ষোভ প্রকাশ করে বেশ কয়েকজন ভোক্তা বলেন, রাম রাজত্ব কায়েমের মাধ্যমে এরা অল্পতেই আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়ার মতো বিপুল অর্থ-বৃত্তের মালিক বনেছেন। আর চড়া দামে কাঁচা তরিতরকারি (সবজি) কিনতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্ব ঐতিহ্য  পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ  পূর্ব সুন্দরবনের উপকূলীয় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ও আশপাশের এলাকায় মৌসুমী কাঁচামালের ( সবজি ) উৎপাদন তেমন নেই। আর চাহিদার তুলনায় উৎপাদন না থাকায় মোরেলগঞ্জ পৌর কেন্দ্রিক নিত্যপণ্যের কাঁচাবাজারকে ঘিরে বিগত কয়েক বছরে গড়ে উঠেছে ১৫ সদস্যের সিন্ডিকেট চক্র। এ চক্রের সদস্যরা হলেন-আব্দুর রশিদ ফকির. হারুনআর রশিদ.  তুজাম্বর মেম্বার.  আল আমিন নজরুল তালুকদার.রফিক, আলু আলম, ফিরোজ, সুমন, কবির, কামরুল, নজরুল, জাহিদ,নাসির ও কালু।

খুলনা, যশোরের সাতমাইল, আঠারোমাইল, কেশবপুর, সাতক্ষীরার তালা, শাহাদাতপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মোরেলগঞ্জে আসে কাঁচামালের তরিতরকারি।

বিগত কয়েক বছর আগে ওই সকল এলাকা থেকে পাইকাররা এখানে সবজি পাইকারি মূল্যে পণ্য সরবরাহ করতেন। কিন্ত নানা প্রভাব বিস্তার ও  করসাজি করে কাঁচামাল ও তরিতরকারির বাজার নিয়ন্ত্রনে নেয় স্থানীয় সিন্ডিকেট চক্র।

শুক্রবার (২০ অক্টোবর ) সকালে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ শহরের সবজির বাজারে ঘুরে দেখা যায়, বেগুন প্রতি কেজি ১০০, পেঁপে ৩০, শসা ৮০, আলু ৪৮, সিম ১৬০, পটল ৮০, করলা ৬০, কাকরোল ৮০, উস্তে ৮০, ঝিঙ্গা ৫০, বরবটি ৮০, মিষ্টি কুমড়া ৪০, কাঁচ কলা প্রতি হালি ৩০ টাকা ও কাঁচা মরিচ মানভেদে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস লাউ ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজির দাম বেশি হওয়ায় অস্বস্তি জানিয়েছেন ভোক্তারা।সবজি ক্রেতা রনি বলেন, সপ্তাহ ধরে একই রকমভাবে বাজারে বাড়তি দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। দাম কমার লক্ষণ দেখছি না। যেখানে এক কেজি সবজি কিনব, সেখানে প্রকারভেদে আধাকেজি ও ২৫০ গ্রাম কিনতে হচ্ছে। সাধ্যের মধ্যে না থাকায় অনেক ক্রেতা একইভাবে সবজি কিনে বাড়ি ফিরছেন।স্থানীয় আরও  বেশ কয়েকজন ক্রেতা বলেন, সিন্ডিকেট আড়তদারদের কারণেই এ বাজারে দাম বেশি। তারা জানান, আশপাশের বাজারের চেয়ে শহরের প্রধান এ বাজারে সবসময় পণ্যের দাম অনেক বেশি নেয়া হয়। স্বল্প দূরত্বে অন্য কোনো বাজার না থাকায় একান্ত বাধ্য হয়ে এ বাজারে চড়া দামে তরকারি কিনতে এসে নাভিশ্বাস উঠে যায় তাদের।

সিন্ডিকেট চক্রটির সদস্যরা সকলেই পৌর বাজারের আড়তদার। এ চক্রটিই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে পুরো বাজার। এদের অনেকেই কাঁচামালের ব্যবসার নামে সিন্ডিকেট করে অল্পদিনেই বিপুল অর্থ, গাড়ি ও বাড়ির মালিক হয়েছে। যখন যে রাজনৈতিক নেতা প্রভাবশালী থাকে তখন তাকে ম্যানেজ করে দিনের পর দিন সিন্ডিকেট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে চক্রটি। তাই সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায় তারা।সবজি বিক্রেতা  সাখাওয়াত হোসেন সেন্টু , জাহাঙ্গীর ফরাজি সহ অনেকেই জানান, বেগুন প্রতি কেজি ১০০, পেঁপে ৩০, শসা ৮০, আলু ৪৮, সিম ১৬০, পটল ৮০, করলা ৬০, কাকরোল ৮০, উস্তে ৮০, ঝিঙ্গা ৫০, বরবটি ৮০, মিষ্টি কুমড়া ৪০, কাঁচ কলা প্রতি হালি ৩০ টাকা ও কাঁচা মরিচ মানভেদে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

মোরেলগঞ্জ কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে আসা রেজাউল হাওলাদার, এইচ এম আসলাম হোসেন, শহিদুল ইসলাম ও সাথী ইসলাম ক্রেতা বলেন,বাজার সহনীয় অবস্থায় নেই। সবজির এত দাম দিয়ে সবজি কিনতে হবে বুঝে উঠতে পারছি না। আগের তুলনায় প্রতিকেজি সবজি প্রায় ২৫ থেকে ৩৫ টাকা বেশিতে কিনতে হয়েছে। সবমিলিয়ে বলতে গেলে বাজারে সবজির দাম বাড়তিই যাচ্ছে।সকাল বিকাল নিত্য পণ্যের দাম ওঠা-নামা করে এখানে। সিন্ডেকেটের বেঁধে দেয়া মূল্যে সকল দোকানেই কাঁচামাল  বিক্রি হয়। আর বিক্রি না হলে সবজি ফেলে দেয়া হয় ড্রেনে । সরবরাহ থাকলেও দাম কমে না সবজির।সবজি বিক্রেতা ইলিয়াছ জানান, সপ্তাহ ধরে সবজির বাজার একই রকম যাচ্ছে। বাজার ভেদে কোনো কোনো সবজির দাম ১৫-২০ টাকা কম-বেশি হয়। পাইকারি বাজার থেকে মাল কেনার পর খাজনা ও পরিবহন খরচ হয়। সে কারণে লাভ রেখে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। তবে শীত মৌসুম না হওয়ায় কিছু কিছু সবজির বাড়তি দাম যাচ্ছে। এর কারণ হলো বাজারে সরবরাহ খুবই কম তাই দাম একটু বাড়তি।পাইকারী বিক্রেতা আব্দুর রশিদ ফকির বলেন, চাহিদার তুলনায় পণ্য সরবরাহ কম তাই গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে সবজির বাজারে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।তবে আগামী মাস থেকে নতুন সবজি আসা শুরু হলে দাম অনেকটা কমে যাবে।

তেল ও চালের দাম স্বাভাবিক থাকলেও মসলা বাজারে  জিড়া কেজি প্রতি ১০২০ টাকা,সাদা এলাচ ও কালো এলাচের ও ডিমের দাম ও বৃদ্ধি পেয়েছে।  কিছু সবজি অতিরিক্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে- এর কারণ হলো উৎপাদন কমে গেছে। আগের তুলনায় সবজি সরবরাহ অনেক কম। আশা করি, এক মাসের মধ্যে শীতকালীন সবজি বাজারে আসা শুরু হলে দাম আগের মতো হয়ে যাবে। মাংসের বাজারে ও দাম বৃদ্ধি অব্যহত রয়েছে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি আকারভেদে কেজিপ্রতি ১৮৫ টাকা, কক মুরগি ৩২০ টাকা কেজি, রুই মাছ ৫০০ টাকা কেজি, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ মাছ ২২০০ টাকা কেজি আর ৭০০ গ্রাম ওজনের ১২০০ টাকা কেজি। এছাড়া, নদীর চিংড়ি আকারভেদে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি।
মাছ কিনতে আসা এক কলেজ ছাত্র শেখ রাহাতুল ইসলাম জয় বলেন, মাছের বাজারে যেভাবে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এতে করে আমাদের  বাসার জন্য মাছ কেনা খুবই কষ্টকর।

আর খুচরা বিক্রেতারা বলেন, আড়ত থেকে যে দর সবজি দেওয়া হয়, তার চেয়ে সামান্য কিছু লাভে আমরা বিক্রি করে থাকেন। দাম বাড়ানো কিংবা কমানোর বিষয়টি আড়ৎদারদের হাতে । তবে মাঝে মধ্যে বাজার মনিটরিংয়ে স্থানীয় প্রশাসন অভিযানে নামে। তখন দু’একজনকে সামন্য জরিমানা ছাড়া তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।

 

এ বিষয়ে কথা হয় মোরেলগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ  দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাজারে কোন সিন্ডিকেট নেই, সবই উড়ো কথা। তারা পাইকারিতে যে দামে পণ্য কেনেন তার চেয়ে সামান্য বেশি দামে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বাগেরহাটের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, ‘সবজির উৎপাদন কম হচ্ছে বলে দাবি করছেন আড়তদাররা। নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মূল্যে তালিকা দেখে অসঙ্গতি থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।