Dainik Sotter Kontho - দৈনিক সত্যের কণ্ঠ
ঢাকাTuesday , 4 July 2023
  • অন্যান্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ইউএনওর উদ্যোগে জীবন বদলে গেল হকার মাহীর

স্টাফ রিপোর্টোরঃ
July 4, 2023 4:29 pm । ২০৮ জন

Google News

কিশোর বয়সে জীবিকার তাগিদে পত্রিকা বিক্রি করে সংসার চালানোর দায়িত্ব নেওয়া মাহী ফিরে এলো শিক্ষায় আলোয় ।

নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়ার চেষ্টা ও আন্তরিকতায় পাল্টে গেছে হকার আবু সালেহ মাহীর( ১৫) জীবন । মাহী উপজেলার পরকোট ইউনিয়নের পূর্বশোশালিয়া গ্রামের আব্দুল কাদের লালনের ছেলে ।

এক সময় মাহির যে হাতে সংবাদপত্রের হকারী করত, বর্তমানে সে হাতে উঠেছে বই- খাতা, কলম । মাহী পরকোট ইউনিয়নের দশঘরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের ছাত্র ।

ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মায়ের মৃত্যুর পর মাহীর জীবনে নেমে আসে অন্ধকার । মায়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন মাহীর বাবা । ২০১৯ সালে এক দুর্ঘটনায় মাহীর বাবা ঘরবন্দী হয়ে পড়েন । পরবর্তীতে করোনা মহামারির সময় স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে অভাবের তাড়নায় মাহী কিছু দিন টাইলসের কাজ করেন । সেখানে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে পত্রিকার হকারের পেশায় যোগদেন মাহী । একদিন পত্রিকা দিতে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা( ইউএনও) মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া তার পেশা সম্পর্কে জানতে চান ।

পড়াশোনার ইচ্ছা আছে কিনা জানতে চাইলে মাহী বলে, আমারও ইচ্ছে করে বই নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কিন্তু বাবার আয় নেই, আমার আয় দিয়েই সংসার চলে । তারপর মাহির সংসার ও পড়াশোনার দায়িত্ব নেন চাটখিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা( ইউএনও) মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া ।

আবু সালেহ মাহীর জানান, আমার মা নেই । বাবা নিরুপায় হয়ে আমাকে কাজে দিয়েছেন । আমি প্রতিদিন পত্রিকা দিতে ইউএনও স্যারের অফিসে যেতাম । ইউএনও স্যারের মনে দয়া হয়েছে । তাই আমার পড়াশোনা ও সংসারের দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন । স্যারের প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব । আমি মানুষের মতো মানুষ হতে চাই, বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই । একজন আদর্শ শিক্ষক হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই ।

মাহির বাবা বলেন, ইউএনও স্যার অনেক ভালো মানুষ । আমার সন্তানের প্রতি তিনি যে দায়িত্ব পালন করেছেন সেটি মূলত বাবা হিসেবে আমার পালন করার কথা ছিল কিন্তু অভাবের কারণে আমি সেই দায়িত্ব পালন করতে পারিনি । ইউএনও স্যারের এই ঋণ আমি কোনদিন শোধ করতে পারবোনা ।

চাটখিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা( ইউএনও) মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমি চাটখিল উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই দেখতাম মাহীর নামের ছোট্ট ছেলে আমাকে পত্রিকা দিতে আসতো । সে এখানকার প্রেসক্লাবের হকার ছিল । এক দুই দিন আসার পর ছেলেটার চোখে আমি মেধা ও সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছি । আমি তার থেকে খবর নেই জানতে পারি তার বাবা শারিরীক ভাবে অক্ষম ফলে তার আয় দিয়েই সংসার চলে । তারপর তার স্কুলের শিক্ষকের সাথে কথা বলে পড়ার ব্যবস্থা করে দেই । মাহীর বাবা জানায় মাহিরের বেতনের টাকায় তাদের সংসার চলে । আমি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে তাকে মাসে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে দেই । অনেকেই মাহিকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন । বছরের শুরুতে একটি সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে স্কুলের ব্যাগ, জুতো, বইয়ের ব্যবস্থা করি । বর্তমানে তাকে চার হাজার টাকা করে দেই ।

সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইউএনও বলেন, মাহী আমার ছোট ভাইয়ের মতো । আমাদের আশপাশে অনেক মাহী আছেন যারা একটু সুযোগের অভাবে পড়াশোনা করতে পারছেন না । বিত্তবান যারা আছেন তারা যদি এসব মাহির পাশে সহানুভূতি নিয়ে তাকাই তাহলে অনেকের জীবন বদলে যেতে পারে । এতে খুব বেশি খরচ হবে না, কিন্তু শিক্ষার মতো একটি মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না ।

নোয়াখালী- ১( চাটখিল- সোনাইমুড়ী) আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম বলেন, নতুন প্রজন্মের যারা ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তারা স্বাধীনতার স্বপক্ষের মানুষ । তাদের বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিল, দাদা মুক্তিযোদ্ধা ছিল অথবা নানা মুক্তিযোদ্ধা ছিল । তার ভেতরে মানবিকতার মূল্যবোধ আছে বলেই তারা এমন উদ্যোগ নিয়েছেন । আসলে মন থেকে না এলে এমন কাজ করা যায় না । তিনি আমাকে বিষয়টি শেয়ার করেছেন আমি বলেছি আপনি যেখানে ঠেকে যাবেন আমাকে জানাবেন । আমি সার্বিক সহযোগিতা করব ।