থানার ওসিকে না জানিয়ে এক বিট থেকে আরেক বিট এলাকায় মাদক উদ্ধার করতে গিয়ে গ্রামবাসীর পিটুনির শিকার হয়েছেন বগুড়ার গাবতলী মডেল থানার উপপরিদর্শক( এসআই) জাহাঙ্গীর আলম । এ সময় গ্রামবাসী পুলিশের হাতে আটক খোকন রায়( ৩৫) নামের এক যুবককে হ্যান্ডকাফসহ ছিনিয়ে নেয় ।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় গাবতলী উপজেলার মড়িয়া হিন্দুপাড়া থেকে খোকন রায়কে ছিনিয়ে নেওয়া হয় । একই দিন দিবাগত রাত ২টার দিকে খোকন রায়কে পুলিশ আটক করলেও হ্যান্ডকাফ উদ্ধার হয়নি ।
খোকন রায় গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের মড়িয়া হিন্দুপাড়া গ্রামের রাজকুমার ওরফে খোকা রায়ের ছেলে । তিনি গোলাবাড়ি বাজারে ওষুধের দোকান পরিচালনা করেন । তাঁর বিরুদ্ধে টাপেন্টাডল বিক্রির অভিযোগে দুটি মামলা রয়েছে ।
জানা গেছে, গাবতলী মডেল থানার উপপরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম কাগইল ইউনিয়ন বিট পুলিশিংয়ের দায়িত্বে রয়েছেন । সোমবার সন্ধ্যার আগে তিনি ছাড়াও সহকারী উপপরিদর্শক( এএসআই) ইউছুব আলী ও কনস্টেবল শাহাদৎ হোসেন মহিষাবান ইউনিয়নের মড়িয়া হিন্দুপাড়া গ্রামে যান । এ সময় ওই গ্রামের নির্মল রায়ের মেহগনি বাগানে বসে থাকা খোকন রায়কে তিনি আটক করেন । এরপর হ্যান্ডকাফের এক প্রান্ত তার এক হাতে এবং অপর প্রান্ত চিকন একটি মেহগনি গাছের সঙ্গে আটকে রাখেন ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের লোকজন বলেন, খোকন রায়ের আত্মীয়স্বজন আটকের কারণ জানতে চাইলে এসআই জাহাঙ্গীর আলম তাঁর কাছে ১০০ পিচ টাপেন্টাডল ট্যাবলেট পাওয়া গেছে বলে জানান । কিন্তু ট্যাবলেট দেখাতে না পারলে গ্রামবাসী পুলিশের ওপর চড়াও হয় । এ সময় পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এএসআই ইউছুব ও কনস্টেবল শাহাদৎ মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যান । পরে গ্রামের লোকজন এসআই জাহাঙ্গীরকে পিটুনি দিয়ে গাছ কেটে হ্যান্ডকাফসহ খোকনকে ছিনিয়ে নেন । খবর পেয়ে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ পৌঁছে এসআই জাহাঙ্গীরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন ।
এদিকে আজ মঙ্গলবার সকালে মড়িয়া হিন্দুপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, খোকন রায়ের বাড়িতে কেউ নেই । তাঁরা ঘটনার পরপরই আত্মগোপন করেছেন । গ্রামের লোকজন জানান, এর আগেও পুলিশ খোকনকে ধরে টাকা দাবি করে । টাকা দেওয়ার পরেও তাঁকে টাপেন্টাডল ট্যাবলেট দিয়ে মামলা দেয় ।
তাঁরা আরও বলেন, ‘ মহিষাবান ইউনিয়নের বিট পুলিশিং অফিসার সুজল দেবনাথ । আমরা তাঁকে চিনি । বিভিন্ন সময় তিনি গ্রামে আসেন । সোমবার যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের আগে কখনো এই গ্রামে দেখা যায়নি । সুজল দেবনাথ সঙ্গে না আসায় আমাদের সন্দেহ হয় । এ কারণে আমরা খোকনকে ছিনিয়ে নিয়েছি । ’
খোকন রায়ের নিকটাত্মীয় পরিমল রায় বলেন, ‘ আমাদের জানামতে খোকন ওষুধের ব্যবসা করে । সোমবার পুলিশ তাঁর কাছে কিছুই পায়নি । তারপরেও হ্যান্ডকাফ দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে । এ কারণে লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ছিনিয়ে নেয় । ’
এসআই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ খোকন রায়কে আটকের পর তাঁর কোমরে লুঙ্গির প্যাঁচে ১০০ পিচ টাপেন্ডাডল ট্যাবলেট পাওয়া যায় । তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় গ্রামের লোকজন হামলা করে খোকনকে ছিনিয়ে নেন । ’ থানার ওসিকে না জানিয়ে মাদক উদ্ধার অভিযানে যাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি নীরব থাকেন ।
গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা( ওসি) সনাতন সরকার বলেন, ‘ খোকন রায়কে আটকের পর ১০০ পিচ টাপেন্টাডল ট্যাবলেট পাওয়া গেছে । তবে এসআই জাহাঙ্গীর মাদক উদ্ধারে অন্য বিটে যাওয়ার বিষয়টি আমাকে কিংবা থানার ডিউটি অফিসারকে জানায়নি । ’
ওসি আরও বলেন, ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে রাত ২টার দিকে গ্রামের জঙ্গল থেকে খোকনকে আটক করা হয়েছে । পরে ১০০ পিচ টাপেন্টাডল ট্যাবলেট উদ্ধার দেখিয়ে খোকন রায়ের নামে মাদক আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে । তবে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি ।