জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) বলেছে, হত্যা এবং বাস্তুচ্যুতির মাধ্যমে গাজার উত্তরাঞ্চলে ফিলিস্তিনি জনসংখ্যাকে ধ্বংসের কারণ হয়ে উঠছে ইসরায়েল। ওই এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে দখলদার বাহিনী।
সোমবার (২১ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই খবর জানিয়েছে আল জাজিরা।
গাজার জাবালিয়া, বেইত হানুন এবং বেইত লাহিয়ার বেসামরিক নাগরিকদের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর সাম্প্রতিক হামলায় ৮৭ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি হামলায় একটি সম্পূর্ণ আবাসিক ব্লক মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
এদিকে, লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার ইসরায়েলের হামলায় লেবাননে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হওয়ার পর অন্তত ১২টি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে আঘাত হেনেছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি বুলডোজার দক্ষিণ লেবাননে একটি শান্তিরক্ষা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ধ্বংস করেছে। লেবাননে জাতিসংঘের অন্তর্বর্তী বাহিনীতে (ইউএনআইএফআইএল) সর্বশেষ হামলার ঘটনা এটি।
এর আগে, গাজায় আরও সহায়তা রুট খুলে দেওয়ার আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা ‘প্রয়োজনীয় মাত্রায়’ মানবিক কার্যক্রম চালাতে অক্ষম হয়ে পড়েছে।
অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের অফিস (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, মাত্র কয়েকটি অবিশ্বস্ত এবং দুর্বল ক্রসিং পয়েন্টের সাহায্যে আমরা মানবিক অপারেশন চালাতে পারছি না।
অপরদিকে ইসরায়েল জানিয়েছে যে, তারা গাজার উত্তরাঞ্চলে হামাসের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে এবং কোনো ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে না।
গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। এই সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ৪২ হাজার ৬০৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ৯৯ হাজার ৭৯৫ জন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। গাজার ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের নজিরবিহীন হামলা হামলায় কমপক্ষে এক হাজার ১৩৯ জন নিহত হয় এবং দুই শতাধিক মানুষকে জিম্মি হিসেবে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে গাজা যুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল।
এরপর থেকে গাজায় টানা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজাবাসী। ইসরায়েলের অবিরাম হামলায় ফিলিস্তিনি ছিটমহলটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ঘরবাড়ি ছাড়া হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি।
জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপের পরিমাণ চার কোটি ২০ লাখ টনেরও বেশি হবে। এসব ধ্বংসস্তূপ ২০০৮ থেকে গত বছর যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত গাজা ভূখণ্ডে সঞ্চিত আবর্জনার ১৪ গুণ এবং ২০১৬-১৭ সালে ইরাকের মসুলে হওয়া যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের পাঁচ গুণের বেশি।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকাজুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১১ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
Leave a Reply