ঈদুল ফিতরের দিন থেকে শুরু হয়েছে শাওয়াল মাস। এই মাসে ছয়টি নফল রোজার বেশ গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল অতঃপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।’ (মুসলিম: ১১৬৪; আবু দাউদ: ২৪৩৩)
এদিকে শেষ হতে চলেছে শাওয়াল মাস। অল্প কিছুদিন পরেই শাওয়াল শেষে জিলকদ শুরু হবে। এখন একটা প্রশ্ন ঘুরেফিরে সামনে আসছে যে, রমজানের কাজা রোজা শাওয়ালে শেষ করতে না পারলে কি জিলকদে ছয় রোজা রাখা যাবে? বা এতে সওয়াব লাভ হবে?
এই প্রশ্নে আলেমদের মধ্যে মতভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। অধিকাংশ ফিকহবিদ এক্ষেত্রে আগে কাজা রোজা রাখতে বলেছেন। এমনকি কাজা রোজা রাখতে রাখতে শাওয়াল শেষ হয়ে গেলেও কাজা রোজাই আগে রাখার কথা বলেছেন। কেননা ‘..যার ওপর কাজা রয়ে গেছে সে রোজা পুর্ণ করেছে বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ ওই রোজাগুলোর কাজা আদায় না করে।’ (আল মুগনি: ৪৪০)
এক্ষেত্রে যারা শাওয়াল মাসেই ছয় রোজা সম্পূর্ণ করতে পারবেন না, তারা পরের মাসে গিয়ে ওই রোজাগুলো রাখবেন। যেমন নেফাসগ্রস্ত কোনো নারী যদি পুরো রমজানে একটি রোজাও না রাখতে পারেন, তাকে তো পুরো শাওয়াল মাসে কাজা রোজা রাখতে হবে। তাই তিনি জিলকদ মাসে গিয়ে শাওয়ালের ৬ রোজা রাখতে পারবেন এবং শাওয়ালের বিশেষ ফজিলতও লাভ করবেন। কেননা শরিয়তসম্মত ওজরের কারণে বাধ্য হয়ে এই বিলম্ব তার হয়েছে। (ফতোয়া সমগ্র ১৯/২০, ফতোয়া নং-৪০৮২ ও ৭৮৬৩)
আরেকদল আলেমের মতে, কাজা রোজার সংখ্যা বেশি হয়ে গেলে আগে শাওয়ালের ৬ রোজা রাখা উত্তম। কেননা শাওয়াল শেষ হয়ে গেলে অন্যমাসে এই ৬ রোজার ফজিলত পাওয়া যাবে বলে কোনো হাদিস নেই। কিন্তু কাজা রোজা বছরের যেকোনো সময় রাখলেই আদায় হয়ে যায়।
আমাদের পরামর্শ হলো— আমাদের মধ্যে যাদের ৫-১০টা বা ১০-১৫টা রোজা কাজা হয়ে গেছে, তারা আগে রমজানের কাজা রোজা রাখব এরপর শাওয়ালের ৬ রোজা রাখব। শাওয়ালের ৬ রোজা যেন কোনোভাবেই ছেড়ে দিতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখব। কেননা হাদিসে শাওয়াল মাসটির উল্লেখ রয়েছে। এরপরও মুহাক্কিক আলেমদের পরামর্শে কেউ যদি শাওয়ালের দুয়েকটি রোজা জিলকদে গিয়ে আদায় করেন, তারা শাওয়ালের বিশেষ ফজিলত থেকে বঞ্চিত হবেন না ইনশাআল্লাহ।
উল্লেখ্য, ঈদের দিনটি বাদ দিয়ে শাওয়াল মাসের যেকোনো ছয়দিনে রোজা রাখা যাবে। ধারাবাহিকভাবে রাখতে চাইলে যখন থেকে খুশি শুরু করা যাবে, আবার বিরতি দিয়ে ছয়টি রোজা পূরণ করতে পারলেও হাদিসে বর্ণিত সওয়াব পাওয়া যাবে। মনে রাখতে হবে, শাওয়ালের ৬ রোজায় বছরজুড়ে রোজা রাখার ফজিলত ওই ব্যক্তির জন্যই কার্যকর হবে, যে ব্যক্তি রমজান মাসজুড়ে ফরজ রোজা আদায় করেছেন, একইসঙ্গে শাওয়ালের রোজাও পালন করেন।
Leave a Reply