1. mdsabbirzamader7@gmail.com : admin :
চার লাখ কোটি টাকা লুটে নেবে আদানি - Dainik Sotter Kontho- দৈনিক সত্যের কণ্ঠ

চার লাখ কোটি টাকা লুটে নেবে আদানি

ডেক্স রিপোর্ট
    Update Time : Wednesday, January 15, 2025
  • 5 Time View
পতিত লুটেরা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে করা আত্মঘাতী চুক্তির কারণে ভারতের আদানি পাওয়ার বাংলাদেশ থেকে লুটে নেবে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা। এই টাকা বিদ্যুতের দামের বাইরে। তন্মধ্যে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ খাতেই বাংলাদেশকে গুনতে হবে সোয়া দুই লাখ কোটি টাকা।

পতিত লুটেরা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে করা আত্মঘাতী চুক্তির কারণে ভারতের আদানি পাওয়ার বাংলাদেশ থেকে লুটে নেবে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা। এই টাকা বিদ্যুতের দামের বাইরে। তন্মধ্যে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ খাতেই বাংলাদেশকে গুনতে হবে সোয়া দুই লাখ কোটি টাকা।

 

বাকি প্রায় পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা আদানিকে দিতে হবে কয়লার বাড়তি দাম হিসেবে। ডলারের মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা কারণে এ লুটের অঙ্ক আরও বাড়তে পারে। উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনার জেরে পতিত আওয়ামী শাসনে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে ১৮৮ শতাংশ। উচ্চ মূল্যের বিদ্যুতে বেড়েছে উৎপাদন খরচ ও পণ্যমূল্য। পকেট কাটা যাচ্ছে ভোক্তাদের। অপরদিকে খালি করে ফেলা হয়েছে রাষ্ট্রীয় কোষাগার।

 

আদানির সঙ্গে চুক্তিপত্রের প্যারায় প্যারায় জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের স্বার্থ। দেড় হাজার মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির অবস্থান ভারতের ঝাড়খণ্ডে, বাংলাদেশের কোনো নিয়ন্ত্রণ বা তদারকি নেই, অথচ সেটির যাবতীয় দায় বাংলাদেশের। সব সুবিধা ও মুনাফা ভারতের আদানি গোষ্ঠীর।

 

দায়মুক্তি আইনের আওতায় ১৫ বছরে যে ৯১টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র অনুমোদন দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে প্রায় দেউলিয়াত্বের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে তার অন্যতম আদানির সঙ্গে চুক্তি। এরই মধ্যে চুক্তিটি বাতিলের দাবি উঠেছে জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে। উচ্চ আদালত সম্প্রতি দায়মুক্তি আইনটিই বাতিল করেছে।

 

সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে দায়-দায়িত্ব নিরূপণ করে দেশবিরোধী লুটেরা চক্রকে আইনের আওতায় আনার। বর্তমান সরকার চুক্তি সংশোধন করতে চেয়েও এগুতে পারছে না বলে জানিয়েছেন খোদ জ্বালানি উপদেষ্টা। বাংলাদেশ সরকার বনাম আদানি বিরোধ শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কতটা সুবিধা পাবে সে ব্যাপারেও সন্দিহান সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

 

আদানির সঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড তথা পিডিবির করা চুক্তির একটি কপি আমার দেশ-এর হাতে এসেছে। চুক্তিপত্র ও দু’পক্ষের মধ্যে চালাচালি করা পত্র এবং নথি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, চুক্তির প্রতিটি ধারা, উপধারা এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে একতরফাভাবে আদানি গ্রুপ সুবিধা পায়। বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা না করে পুরোপুরি একতরফা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে বিগত সরকার।

 

পিডিবির সঙ্গে আদানির চুক্তি সই হয় ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় তখন গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদী ও লুটেরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্ডারে ছিল। জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন তৌফিক এলাহী চৌধুরী যিনি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী ছিলেন নসরুল হামিদ।

 

তিনিও এখন ফেরারি। সে সময় বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ছিলেন আহমেদ কায়কাউস। তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক। আর পিডিবির চেয়ারম্যান ছিলেন প্রকৌশলী খালিদ মাহমুদ। তিনি দেশেই বহাল তবিয়তে আছেন।

 

ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী আদানি গ্রুপের কর্ণধাররা ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী মোদির অতি ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। আদানির সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তির ক্ষেত্রে যে দু’দেশের সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সংশ্লিষ্টতা ও বোঝাপড়া ছিল তা স্পষ্ট হয়েছিল অনেক আগেই। ভারতীয় পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছেন, আদানিকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দিতেই মোদি চাপ দিয়ে বাংলাদেশকে চুক্তি করতে বাধ্য করেছিল।

 

আদানির বিদ্যুৎ কিনতে সরকার ২০১৬ সালে বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) শেখ ফয়েজুল আমীনকে সদস্যসচিব করে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করেছিল। ওই কমিটি আদানি গ্রুপের বিদ্যুতের দাম বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে বেশি বলে মত দেয়।

 

বিস্ময়করভাবে একই কমিটি ২৫ বছর মেয়াদে আদানির বিদ্যুৎ কেনার সুপারিশ করে। লুটপাটের সুবিধার্থে এ চুক্তি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনের (দায়মুক্তি আইনের) আওতায় করার পরামর্শ দেওয়া হয় কমিটির পক্ষ থেকে। সদ্য বাতিল হওয়া ওই ইনডেমনিটি আইন অনুযায়ী, আদানির সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে দেশের কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ ছিল না।

 

আদানির কেন্দ্রটি ১ হাজার ৪৯৮ মেগাওয়াটের স্থাপিত ক্ষমতার। চুক্তি অনুযায়ী, এই কেন্দ্র থেকে পিডিবি কখনোই ৩৪ শতাংশের নিচে বিদ্যুৎ নিতে পারবে না। বাংলাদেশ যদি কম বিদ্যুৎ নেয়, তাহলেও ৩৪ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে যত কয়লা ব্যবহার করা হতো, তার পুরোটার দাম বাংলাদেশ আদানিকে দেবে। শুধু কয়লার দামই নয়, কয়লা পরিবহনের জাহাজ ভাড়া, বন্দরের ব্যয় ও কয়লার পরিবহনের অর্থও পাবে আদানি।

 

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পটুয়াখালীর পায়রায় স্থাপিত সরকারি প্রতিষ্ঠান আরপিসিএল ও নরেনকোর ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্র। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৪৯৩ দশমিক ৪৮ গ্রাম কয়লার দাম পাবে। অথচ একই পরিমাণ বিদ্যুতের জন্য আদানি পাবে ৫৫৫ দশমিক ৪৩ গ্রাম কয়লা। এতে বাড়তি কয়লার দাম বাবদ বছরে ৬ হাজার কোটি টাকা বেশি নিয়ে যাবে আদানি। অর্থাৎ ২৫ বছরে বাড়তি কয়লার দাম বাবদ আদানি লুটে নেবে দেড় থেকে পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা।

 

আদানির সঙ্গে চুক্তিতে কয়লার সিস্টেম লস ধরা হয়েছে ১ দশমিক ১০ শতাংশ। অর্থাৎ ১ লাখ টন কয়লা পরিবহনের সময় ১ হাজার ১০০ টন নষ্ট হয়ে গেছে দাবি করে তার দাম নিতে পারবে আদানি। পায়রায় দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ও রামপাল কেন্দ্রে সিস্টেম লসের কোনো বিধানই রাখা হয়নি।

 

 

আত্মঘাতী শর্তের কারণে ক্যাপাসিটি চার্জ খাতেও বাংলাদেশ ফতুর হয়ে যাচ্ছে। চুক্তিতে ক্যাপাসিটি পেমেন্টের মধ্যে চারটি অংশ রয়েছে। এগুলো হলো পরিবর্তনশীল কেন্দ্র ভাড়া, স্থির কেন্দ্র ভাড়া, ইউএস সিপি ইনডেক্স (যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার) ও রক্ষণাবেক্ষণের অর্থ। আদানির বিদ্যুতে ইউনিটপ্রতি শুধু ক্যাপাসিটি পেমেন্টই পড়বে প্রায় ৬ সেন্ট, যা দেশীয় মুদ্রায় ৭ টাকা ২০ পয়সা।

 

সে হিসাবে বছরে আদানি শুধু কেন্দ্র ভাড়াই নেবে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। ২৫ বছরে বাংলাদেশি মুদ্রায় তা দাঁড়াবে সোয়া দুই লাখ কোটি টাকায়। বাংলাদেশের গ্যাসভিত্তিক ও তেলভিত্তিক বেসরকারি রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গড় ইউনিটপ্রতি ক্যাপাসিটি চার্জ ৯০ পয়সা থেকে ১ টাকা ২০ পয়সা পর্যন্ত।

 

আদানি গোষ্ঠী কয়লা বাণিজ্যেও জালিয়াতির আশ্রয় নিচ্ছে। খোদ নিজ দেশ ভারতেই তাদের জালিয়াতি চিহ্নিত করেছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। বিভিন্ন দেশে আদানির ক্ষেত্র থেকে উত্তোলিত কয়লা নিজেরাই খেয়াল খুশিমতো দাম বাড়িয়ে আমদানি করে। প্রায় দ্বিগুণ পর্যন্ত দামে কারসাজির অভিযোগ রয়েছে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে।

 

বাজারে কয়লা, গ্যাস বা তেলের দামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ক্রেতার কাছে বিদ্যুতের দাম দাবি করা হয়। আদানির নিজস্ব কয়লাখনি রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইন্দোনেশিয়ায়। তারা ওইসব ক্ষেত্র থেকে উত্তোলিত কয়লার দাম সব সময় বাজারের চেয়ে বেশি দেখায়- এমনটাই প্রমাণ পেয়েছে ভারতের শুল্ক গোয়েন্দা দপ্তর।

 

২০১৬ সালের জুলাইয়ে ভারত সরকারের কাছে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেয় শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। সেখানে বলা হয়, কয়লা আমদানিকারকরা আমদানির ক্ষেত্রে প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ বেশি দাম দেখিয়েছে।

 

চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রতি ৩ মাস পর কত বিদ্যুৎ নেবে তা আগেই ঘোষণা করতে হবে। যদি বাংলাদেশ এর চেয়ে কম বিদ্যুৎ নেয়, তাহলেও ঘোষিত পরিমাণের সমান দাম পরিশোধ করতে হবে। অথচ বাংলাদেশে যেসব বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে, সেগুলোর কাছ থেকে যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু বিদ্যুৎ নেয় পিডিবি।

 

চুক্তি অনুযায়ী, আদানি ইচ্ছা করলেই তৃতীয় পক্ষের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে। তৃতীয় পক্ষের কাছে কেন্দ্রটি যদি বেশি দাম পায়, তাহলে তারা সেখানে বিদ্যুৎ বিক্রি করে দিতে পারবে তাতে বাংলাদেশের কিছুই বলার থাকবে না। বাংলাদেশ ও ভারতে বিদ্যুৎ বেশি প্রয়োজন হয় গ্রীষ্মকালে। এখন আদানি যদি গ্রীষ্মে ভারতে বিদ্যুৎ দেয় আর শীতে বাংলাদেশকে দেয়, তাহলে তা বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে না।

 

আবার চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের কিছু করারও থাকবে না। এরই মধ্যে ভারত ১২ আগস্ট তাদের বিদ্যুৎ ক্রয়ের নীতিমালায় পরিবর্তন আনে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ভারতের সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানগুলো আদানির গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ কিনতে পারবে। এ নীতিমালার আওতায় আদানি ভারতে বিদ্যুৎ বিক্রি করেও চুক্তির আওতায় নানাভাবে বাংলাদেশের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করতে পারবে।

 

আদানির সঙ্গে চুক্তিতে দেশের স্বার্থ বিসর্জন দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই সময়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)’র চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী খালিদ মাহমুদ আমার দেশকে বলেন, আদানির চুক্তির প্রক্রিয়া চলাকালে আমি কিছু সময় দায়িত্বে ছিলাম। পুরো প্রক্রিয়ায় নয়। দেশের স্বার্থ বিসর্জন দেওয়ার দায় সংক্রান্ত আমার দেশ-এর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্য চুক্তিগুলো যেভাবে হয়েছে, আদানির সঙ্গেও সেভাবে হয়েছে।

 

জানতে চাইলে বর্তমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান আমার দেশকে বলেন, আদানির সঙ্গে চুক্তির কারণে দেশের ক্ষতি নিরূপণ ও করণীয় নির্ধারণে একটি কমিটি কাজ করছে। আইনগত দিক খতিয়ে দেখার জন্য একজন বিদেশি আইনজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী আমরা অগ্রসর হব।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © দৈনিক সত্যের কণ্ঠ- ২০২৫