নরসুন্দা নদীটি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলার একটি নদী। নদীটি মূলত কিশোরগঞ্জ জেলা শহর এবং নান্দাইল ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা শহর এ নদীর তীরে অবস্থিত। নদীটির দৈর্ঘ্য ৫৭ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৮০ মিটার ৷৷বর্তমানে নদীটি মৃত প্রায়। দেখা যায় কিশোরগঞ্জ বড়বাজারের আবর্জনা, অবৈধ দখলে-দূষণে নদীটি আজ ধ্বংশ প্রায়। দেখলে মনে হবে ময়লার বাগাড়৷
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। তাই নদ-নদীর সঙ্গে এ দেশের মানুষের সখ্যতা, প্রেম অনাদিকাল থেকেই। এমনকি নদীপথই এক সময় মানুষের যাতায়াতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমে ছিল। কিন্তু অবহেলা, দায়িত্বহীনাকর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন না করার কারণে দেশের অনেক নদ-নদীর এখন মৃতপ্রায় অবস্থা। বর্তমান সময়ে নদী রক্ষায় তেমন কোনো উদ্যোগ বা পদক্ষেপও নেই। দখল-দূষণে বিপন্ন হয়ে পড়েছে কিশোরগঞ্জের নরসুন্ধা নদীটি। পলি জমে অনেক নদীর গতিপথ বন্ধ হয়ে গেছে। কোথাও দেখা যায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদী দখল করে অবৈধ স্থাপনা, বাজার বসানো,ঘরবাড়ি, শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন আর এভাবেই মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নরসুন্ধা নদী। কিশোরগঞ্জ জেলার এক ঐতিহ্যেবাহী নদী ‘নরসুন্দা’। এই নদীটির আরেক নাম ‘নাগচিনি’।এই নদীটিকে বাচানোর জন্য নদীটি পুনঃখনন করে সরকারিভাবে বড় প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে৷জানা যায় বিগত অনেক টাকা খননে বরাদ্দ থাকলেও তা সঠিকভাবে খরচ হয়নি বলে জানাযায়। অনুসন্ধানে জানা যায় কোটি টাকা ব্যয়ের পরও নদীটির করুণ অবস্থার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং কিশোরগঞ্জ শহরের ভেতরের অংশ এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। শহরের কাচারি বাজার, বড় বাজারসহ কয়েকটি বাজারের সব ময়লা- আবর্জনা ও জবাই করা পশুর বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে। দুর্গন্ধে দুর্বিষহ জীবন পার করতে হচ্ছে কিশোরগঞ্জবাসীকে। নদীর পাড় দিয়ে চলতে হলে নাক চেপে ধরে চলাচল করতে হয়। নদীর পাড় দিয়ে বানানো ওয়াকওয়ের অবস্থা আরও শোচনীয়। নদীর তীর বলতে যে সুন্দর, স্বাস্থ্যকর ও নান্দনিক পরিবেশ অনুমান করা হয়, সেটি এখানে অনুপস্থিত। ভূমিখেকো চক্রের অবৈধ দখল ও স্থাপনা
নির্মাণ এবং ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ের আস্তানা হয়ে গেছে নরসুন্দা নদী। আর শহরের পৌর এলাকা’সহ বিভিন্ন এলাকায় ক্যান্সারে আক্রান্ত আজ ‘নরসুন্দা নদী’র বিষাক্ত দূর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। ওই বিষাক্ত দূর্গন্ধে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি ভরাট হয়ে যাওয়া নরসুন্দা নদীতে পানি সংকটের ফলে ব্যঘাত ঘটছে চাষাবাদে। ফলে চরম বিপাকে রয়েছেন কৃ খকরাও
কিশোরগঞ্জ পৌর এলাকায় নদীর দুই তীর অবৈধভাবে দখল, ময়লা-আবর্জনা ফেলে ও অবৈধভাবে ভরাট করায় নরসুন্দা নদী তার যৌবন হারিয়ে একটি মরা খাল তথা ড্রেনে পরিণত হয়েছে। তাই বর্ষা মৌসুমেও এটি যে একটি নদী তা বুঝার উপায় নেই। নরসুন্দা নদীর এমন পরিণতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আমাদের কৃষিখ্যাতের ও ধ্বংস হয়েছে আমিষের চাহিদা পূরণের অন্যতম ক্ষেত্র। অথচ এক সময় ওই নরসুন্দা নদীর বুক দিয়ে চলাচল করতো বড় বড় লঞ্চ-স্টিমার ও পালতোলা নৌকা।
শহরের রথখলা এলাকায় নদীটি দখল করেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, একরামপুর হয়ে শোলাকিয়া ও বয়লা এলাকার দুপাশ দখল করে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা গড়ে তুলেছেন বসতবাড়ী, ও একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শোলাকিয়া ঈদগা রোডের নদীর পাড়ের বেশীর ভাগ বসতবাড়ীগুলো গড়ে তুলেছেন নরসুন্ধার উপর। দেখার কেউ নেই। এলাকাবাসীরা জানান, বিগত পতিত সরকারে প্রভাব কাটিয়ে শোলাকিয়া এলাকার নরসুন্ধা পাড়ের বসতিরা নদীটিকে দখলে নিয়ে গড়ে তুলেছেন বসতবাড়ী। অন্তবর্তী সরকারের কাছে আমাদের দাবি এখনই নরসুন্ধা দখলকারীদের উচ্ছেদ করে নদীটি দখলমুক্ত করার হউক।
শহরের ব্যস্ততম জায়গা গৌরাঙ্গ বাজার ব্রিজ বা বড় বাজার ব্রিজ থেকে নদীটি দেখে যে কারও মন খারাপ হতে পারে। চারদিকে ময়লার স্তুপ আর আবর্জনা ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে না। কিন্তু এক সময় এ নদী দিয়ে বড় বড় লঞ্চ, ট্রলার যাতায়াত করত। নদীতে পাওয়া যেত নানা রকমের মাছ। বর্ষায় পানিতে থাকত ভরপুর। আজকের প্রজন্মের
কাছে এসব শুধু গল্পকথা। ময়লা-আবর্জনায় নদীটি ভরাট হয়ে দিনেদিনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। কচুরিপানা আর ময়লার জন্য পানি প্রবাহের সামান্য সুযোগও নেই। মাঝেমধ্যে কোথাও ডোবার মতো অল্প পানি জমে আছে। নদী ভরাট করে বসানো হয়েছে অস্থায়ী বাজার। প্রশাসন ও পৌরসভা নদীটি রক্ষায় কার্যকর কিছুই করেনি। নদীটির অস্তিত্ব এখন পুরোপুরি ধ্বংসের মুখে। নরসুন্দার অবয়ব থেকে ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে নদীর চিহ্ন। অস্তিত্ব বিলীন হতে যাওয়া নরসুন্দা রক্ষায় সবার এগিয়ে আসা উচিত। সরকারকে দেশের নদী রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নরসুন্দা নদীর দুপাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকানপাট, দালান-কোঠা অপসারণ করে নদীটি খনন করে হাওড়ের সঙ্গে পানি চলাচলের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে নরসুন্দা আবার প্রাণ ফিরে পাবে। এই নদী থেকে অবৈধ স্থাপনা যদি দ্রুত অপসারণপূর্বক দখলদারদের মালিকানা বাতিল করা জরুরী প্রয়োজন।
বিশিষ্টজনদের অভিজ্ঞতা হলো- নদীর অবৈধ দখলদার, স্থানীয় প্রশাসন-স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি মিলে একটি জোট গঠিত হয়। এই জোট ভয়াবহ হয়ে ওঠার আগেই নদীটি দখলমুক্ত করতে হবে। দ্রুতই নরসুন্ধা নদীকে মুক্ত করতে হবে। পরিবেশ-প্রতিবেশ-অর্থনীতি-কৃষি-জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার স্বার্থেই এ কাজ জরুরি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কিশোরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, নরসুন্দা নদীকে অবৈধ দখলদারদের দখল হতে রক্ষার্থে সিএস নকশা অনুযায়ী অবৈধ দখলদারদের তালিকা দ্রুত করে বিভাগীয় কমিশনার, ঢাকা মহোদয়ের কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে, সদয় পরবর্তী নির্দেশনার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নরসুন্দা নদীতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইডব্লিউএম কর্তৃক সম্ভাব্যতা যাচাই চলমান রয়েছে। বাস্তবায়নযোগ্যতা নিরীক্ষার সুপারিশের আলোকে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ৷৷
Leave a Reply