1. mdsabbirzamader7@gmail.com : admin :
হার্টে তিনটি রিং পরানো, দড়ি বেঁধে নেওয়া হয় আদালতে - Dainik Sotter Kontho- দৈনিক সত্যের কণ্ঠ

হার্টে তিনটি রিং পরানো, দড়ি বেঁধে নেওয়া হয় আদালতে

ডেক্স রিপোর্ট
    Update Time : Wednesday, January 8, 2025
  • 6 Time View
হার্টে ব্লক ধরা পড়ায় তিনটি রিং পরানো হয়েছে মাত্র চার মাস আগে। তখনও পুরোপুরি সুস্থ নন তিনি। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খুব সাবধানতার সঙ্গে চলাফেরা করেন। অথচ এমন ব্যক্তিকেও ছাড় দেয়নি আওয়ামী সরকারের পুলিশ বাহিনী।
ছবিঃ আমার দেশ

 

হার্টে ব্লক ধরা পড়ায় তিনটি রিং পরানো হয়েছে মাত্র চার মাস আগে। তখনও পুরোপুরি সুস্থ নন তিনি। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খুব সাবধানতার সঙ্গে চলাফেরা করেন। অথচ এমন ব্যক্তিকেও ছাড় দেয়নি আওয়ামী সরকারের পুলিশ বাহিনী।

 

শুধু গ্রেপ্তার করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা। সম্পূর্ণ নিরপরাধ ব্যক্তিকে অস্ত্র মামলা দিয়ে রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। কারারুদ্ধ ছিলেন দেড় মাস। এমনই বর্বর ঘটনা ঘটেছে দেশের অন্যতম আলেম অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীনের সঙ্গে। এমনকি তাকে দড়ি বেঁধে আদালতে তোলা হয়।

 

দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজধানীর তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপালসহ বহু ধর্মীয়, শিক্ষা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন মাওলানা যাইনুল আবেদীন। ফ্যাসিস্ট সরকারের নানা জুলুম-নির্যাতনের প্রত্যক্ষ সাক্ষী তিনি।

 

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দীর্ঘসময় এ দেশে এমন লোকদের শাসনের অধীনে ছিল, যারা দেশপ্রমেকি আলেম-ওলামাদের ওপর চরম জুলুল নির্যাতন করেছে। তাদের মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, গ্রেপ্তার করে জেলখানায় পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।

 

সেখানেও তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের রিমান্ডের নামে থানায় রেখে চালানো হয়েছে নির্যাতন। সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে একের পর এক বানোয়াট মামলা দিয়ে নিপীড়ন চালানো হয়েছে এই আলেমদের ওপর। নিজেও এ ধরনের জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

 

মাওলানা যাইনুল আবেদীন আমার দেশকে বলেন, ‘২০১৮ সালের ১২ আগস্ট আমরা সাতজন শিক্ষক মিলে মাদরাসাশিক্ষকদের সমস্যা নিয়ে পরামর্শ করার জন্য উত্তরার তানজিমুল উম্মাহ মাদরাসায় বসেছিলাম।

 

এসব বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য তৎকালীন শিক্ষাসচিব আমাকে বলেছিলেন। তার সেই নির্দেশনা অনুযায়ী এই বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ সেখানে পুলিশ এসে ঘেরাও করে ফেলে। আমরা বললাম, আমরা তো মাদরাসাশিক্ষা নিয়ে কথাবার্তা বলছি।

 

এতে ধরার কী আছে? তারা কোনো কথাই শুনতে রাজি হলো না। তারা সবাইকে আটক করে নিয়ে যায় উত্তরা উত্তর থানায়। সেখানে অনেক লোক গিয়ে সুপারিশ করেছিল, এরা তো কোনো দোষী নয়। কিন্তু পুলিশ জানায়, ওপরের নির্দেশ, তাদের ছাড়া যাবে না।’

 

প্রবীণ এই আলেমকে গ্রেপ্তারের পর সারারাত উত্তরা থানায় রাখা হয়। পরদিন সকালে আদালতে তুলে তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। আর তার মতো একজন প্রবীণ আলেমকে আদালতে তোলা হয় দড়ি বেঁধে। এ সময় তার সঙ্গে আরও সাতজন মাদরাসাশিক্ষক ছিলেন। পুলিশের এ ধরনের আচরণের ঘটনায় তাৎক্ষণিক কোর্টে পিটিশন দেওয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন। এ ছাড়া মৌখিকভাবেও এই আচরণের প্রতিবাদ জানানো হয় আদালত প্রাঙ্গণে।

 

তাদের উত্তরা থানায় প্রচণ্ড গরমের সময় ফ্যান ছাড়াই ফ্লোরে থাকতে দেওয়া হয়। তবে তিন দিনের রিমান্ডে যাইনুল আবেদীনকে কিছুই জিজ্ঞাসা করা হয়নি। রিমান্ড শেষে আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয় কেরানীগঞ্জ কারাগারে। যাইনুল আবেদীন জানান, রিমান্ডে তাদের শারীরিক নির্যাতন না করলেও মানসিক নির্যাতনটা বেশি হয়েছে। সেই মানসিক নির্যাতনের ধরন নানা ধরনের। তাদের নামে অস্ত্র মামলা দেওয়া হয়েছে। এখনও তুরাগ থানায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অস্ত্র মামলা রয়েছে।

 

হার্টের রোগী মাওলানা যাইনুল আবেদীন গ্রেপ্তারের পরও ছিলেন অসুস্থ। যে কারণে আদালতের মাধ্যমে কেরানীগঞ্জ কারা নিয়ন্ত্রণে তাকে একটি হাসপাতালে রাখা হয়। এ সময় খাওয়া-দাওয়াসহ নানা কষ্টের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে যাইনুল আবেদীন বলেন, কারাগারের খাবার তো খাওয়া যায় না। বেশিরভাগ সময় কিনে খেতে হয়েছে।

 

তিনি বলেন, আগে থেকেই তিনি হার্টের রোগী ছিলেন। একপর্যায়ে হার্টে ব্লক ধরা পড়ায় তিনটি রিং পরানো হয়। এর চার/পাঁচ মাস পরই গ্রেপ্তার হন তিনি। পরে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে আদালতে নেওয়ার দৃশ্য সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। যাইনুল আবেদীন বলেন, আমাকে গ্রেপ্তারের পর অনেকে আন্দোলন করতে চেয়েছিলেন, আমি তাদের নিষেধ করেছিলাম। কারণ আন্দোলন করে লাভ হবে না, তারা তো ছাড়বে না।

 

সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে গ্রেপ্তার করে নিয়ে এসে তিনটি অস্ত্র মামলা দেওয়া হয় এই আলেমের বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব মামলা ছিল মিথ্যা ও জালিয়াতির। এ কারণে হাসপাতালের লোকজন সবাই হাসছিল যে, আপনাকে অস্ত্র মামলা দিয়েছে? অস্ত্র তো দূরের কথা, থানাই তো আমি চিনি না। এই মামলার বিরুদ্ধে আদালতে ডানপন্থি সব উকিল দাঁড়িয়েছিল আমার পক্ষে কথা বলার জন্য। কিন্তু আদালত কোনো কথাই শোনেনি। তারা সেদিন আমাকে জামিন দেয়নি।

 

তিনি জানান, দীর্ঘ দেড় মাস পর জামিনে কারামুক্তি পেলেও স্বাভাবিক চলাফেরার সুযোগ ছিল না। গ্রেপ্তার-নির্যাতন এড়াতে সবসময় সাবধানে চলাফেরা করতে হতো। রাতে নিজের বাসায় থাকতে পারতেন না তিনি। তা ছাড়া গ্রেপ্তার-পরবর্তী সময়ে তার পরিবারের সদস্যদেরও ডিবির লোকরা বিভিন্নভাবে মানসিক হয়রানি করেছে। যখন-তখন বাসায় এসে ডিবির লোকরা নজরদারি করত। নানা খোঁজখবর নিত।

 

 

যাইনুল আবেদীন বলেন, বিগত আওয়ামী সরকার ও শেখ হাসিনা মুখে ইসলামের পক্ষের লোক হিসেবে দাবি করলেও বাস্তবে তারা ইসলামের পক্ষে কিছুই করেননি। তারা যা করেছেন, ইন্ডিয়ার পক্ষেই করেছেন। ইসলামকে, ইসলামের শিক্ষা তথা কোরআন-হাদিসের শিক্ষাকে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য যা করার দরকার, সবই তারা করেছেন।

 

পাঠ্যবইয়ে কোরআন ও হাদিসের ওই অংশটুকুই দিয়েছেন, যেখানে কোনো জিহাদের কথা নেই। এ সরকার যদি পরিবর্তন না হতো, তাহলে যে বই ছিল তাতে মাদরাসাছাত্র বা মুসলমানদের শিক্ষার কিছু থাকত না। দুনিয়ার বই দিয়ে ভরে ফেলেছেন। শেখ মুজিবের জীবনী বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। শেখ রাসেল লাইব্রেরি করা হয়েছিল। মাদরাসাতেও শেখ হাসিনার ছবি টানানো বাধ্যতামূলক করেছিলেন।

 

তিনি বলেন, আওয়ামী সরকারের সময় প্রবীণ আলেমদের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে, জেলে নেওয়া হয়েছে। মূলত, ইসলামবিরোধী ছিল শেখ হাসিনার সরকার। তাদের চক্রান্ত ছিল। সেই চক্রান্ত বাস্তবায়নের জন্যই আলেম-ওলামাদের ওপর জুলম নির্যাতন চালানো হয়। জেলখানায় নিয়ে প্রায় সবার বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা দেওয়া হয়েছে। কারও কারও নামে নারী নির্যাতনের মামলাও হয়।

 

তা’মীরুল মিল্লাত মাদরাসার সাবেক এই প্রিন্সিপাল বলেন, মাদরাসায় যখন-তখন পুলিশ যেত। পুলিশ গিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করা ও কথা বলতে চাইত। নানা খোঁজখবর নিত। কেউ জামায়াত-শিবির করে কি না ইত্যাদি জানতে চাইত। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের তো আগেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গণতান্ত্রিক দেশ, এখানে তো বিভিন্ন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতেই পারে। কিন্তু সে কথাও বলা যেত না।

 

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের সময় আলেম-ওলামাসহ সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতনের মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এ জন্য ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর সমস্ত মানুষ আনন্দে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। এখন নাকি আবার তিনি দেশে ফিরে আসতে চান। এটা কখনও সম্ভব হবে না। দেশে এলে তাকে প্রতিহত করতে পুরুষ মানুষ লাগবে না, নারীরাই এবার রাস্তায় নেমে পড়বেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © দৈনিক সত্যের কণ্ঠ- ২০২৫