সদ্য শেষ হওয়া অস্ট্রেলিয়া-ভারতের মধ্যকার বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির গ্যালারিতে ভিন্ন দৃশ্য দেখা গেছে। প্রতিটি ম্যাচেই মাঠ ছিল দর্শকে ভরপুর। লাল বলের ক্রিকেটে এমনটা সচরাচর দেখা যায় না। উপচে পড়া দর্শকদের দেখে ভিন্ন এক ভাবনাই কাজ করেছে জয় শাহর মাথায়। দ্বি-স্তরের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চালুর পরিকল্পনা করে যাচ্ছেন এক মাস আগে আইসিসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়া ভারতীয় এ ক্রিকেট কর্মকর্তা। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সাবেক এ সেক্রেটারির বিশ্বাস, জায়ান্ট দলগুলোর টেস্ট ম্যাচ দর্শক টানার ক্ষমতা বেশি।
তাই ক্রিকেট দুনিয়ার বড় দলগুলোকে প্রথম স্তরে রেখে নব্য টেস্ট ব্যবস্থা প্রবর্তনের পথে হাঁটতে চান তিনি। বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ভারত-অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলগুলোকে প্রথম স্তরে রাখতে চায়। আর দ্বিতীয় স্তরে পাঠিয়ে দিতে চায় বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তানের মতো দলগুলোকে। যদিও পুরো বিষয়টা এখনো রয়েছে আলোচনার টেবিলে।
দ্বি-স্তর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সম্ভাবনা নিয়ে ইতোমধ্যে ইংল্যান্ড ও ওয়েল ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক সেরে ফেলেছেন আইসিসির প্রধান কর্তা-ব্যক্তি জয় শাহ। অন্যান্য বোর্ডগুলোর সঙ্গে পরে আলোচনায় বসবেন জয় শাহ। এমন খবরই দিয়েছে সিডনি মর্নিং হেরাল্ড। তবে দুই স্তরের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চালু হলে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মতো দলগুলোর বিপক্ষে টেস্ট খেলতে পারবে না বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মতো দলগুলো।
আইসিসি প্রথম স্তরে রাখতে চাইছে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানকে। আর দ্বিতীয় স্তরে খেলার সুযোগ করে দেবে বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তান, জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ডকে। দুই স্তরের টেস্টের মাঝে থাকবে এক স্তর থেকে অন্য স্তরে অবনমন ও উত্থানের ব্যবস্থা। এই নিয়মে প্রথম স্তরে সবচেয়ে খারাপ খেলা দলটি নেমে যাবে দ্বিতীয় স্তরে। আর দ্বিতীয় স্তরে সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স উপহার দেওয়া দলটি টিকিট কাটতে পারবে প্রথম স্তরে। তবে এই নিয়ম চালু করা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। আর অবনমন-উত্থানের এমন পদ্ধতি থাকলে সেটা কিভাবে কার্যকর হবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়।
টেস্ট ক্রিকেটকে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তুলতে নতুন এই পরিকল্পনা এখনই আলোর মুখ দেখছে না। ২০২৭ সালের পরের কোনো এফটিপি থেকে কার্যকর হতে পারে দুই স্তর বিশিষ্ট টেস্ট ক্রিকেট ব্যবস্থা। এর আগে ২০১৬ সালেও দুই স্তরের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুর গুঞ্জন উঠেছিল। তখন র্যাঙ্কিংয়ের শেষের পাঁচ দলকে নিয়ে দ্বিতীয় স্তর টেস্ট চালুর আলোচনা উঠলেও শেষ পর্যন্ত তা ধোপে টেকেনি। এবার কি হয় তার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে ক্রিকেট অনুরাগীদের।
জয় শাহর মতো দ্বি-স্তর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ দেখতে চান ভারতের সাবেক ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার ও কোচ রবি শাস্ত্রীও। ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার সবশেষ টেস্ট সিরিজে দর্শকদের আগ্রহ দেখে এই কাঠামোর পক্ষে মত দেন শাস্ত্রী, ‘দর্শক উপস্থিতি শতবছরের মধ্যে ভেঙে যাওয়ার কারণ বড় দলগুলো খেললে এটা সেরা আবেদন তৈরি করে, রোমাঞ্চ, উত্তেজনা তৈরি করে। আইসিসিকে স্মরণ করিয়ে বলতে চাই সেরা যদি সেরার বিপক্ষে খেলে তবে টেস্ট ক্রিকেট টিকে থাকবে। অন্য কোনো পথ নেই।’
Leave a Reply