উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনের উদ্দেশ্যে রাত ১১টা ২৫ মিনিটে ঢাকা ত্যাগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। হাজার হাজার নেতাকর্মী বিমানবন্দরে যাওয়ার রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে তাকে বিদায় জানান। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। এর আগে রাত ১০টা ৫০ মিনিটে তিনি ৮ নম্বর গেট, অর্থাৎ ভিভিআইপি গেট দিয়ে বিমানবন্দরে প্রবেশ করেন।
রাত ১০টায় ফ্লাইট ছাড়ার কথা থাকলেও সড়কে নেতাকর্মীদের ঢল নামায় বাসা থেকে এয়ারপোর্টে পৌঁছতে দুই ঘণ্টা বেশি সময় লাগে।
কাতারের দোহায় ট্রানজিট দিয়ে যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছার পর খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাবেন বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও পুত্রবধূ কার্ডিওলজিস্ট ডা. জোবাইদা রহমানসহ যুক্তরাজ্য ও ইউরোপ বিএনপির নেতাকর্মীরা। এছাড়া লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন থেকে সেখানকার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মো হজরত আলী ও হেড অব চ্যান্সরি মো. শাহরিয়ার মোস্তফা বেগম জিয়াকে স্বাগত জানাবেন। হিথ্রো থেকে তারেক রহমান গাড়ি চালিয়ে মাকে নিয়ে যাবেন লন্ডন ক্লিনিকে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বিমানবন্দরে গিয়ে দলের চেয়ারপারসনকে বিদায় জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ছয় চিকিৎসক, নার্স, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১৫ সদস্য রয়েছেন। বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সরাসরি খালেদা জিয়াকে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হবে বলে জানান তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ছয় চিকিৎসক, নার্স, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১৫ সদস্য রয়েছেন। বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সরাসরি খালেদা জিয়াকে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হবে বলে জানান তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন।
মঙ্গলবার রাত ৮টা ১৫ মিনিট বাসা থেকে বের হয়ে বিমানবন্দর উদ্দেশে রওনা দেয় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। সাধারণ উৎসুক মানুষ ও দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী খালেদা জিয়াকে একনজর দেখতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন। সন্ধ্যার আগে থেকে গুলশানে বাসভবন ও আশপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। গুলশান থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত প্রায় কয়েক কিলোমিটার সড়কে মানবপ্রাচীর তৈরি করেন দলটির নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়ার গাড়ির আগে পড়ে কয়েক শতাধিক গাড়ি ও মোটরসাইকেলের দিয়ে নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়াকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রাকে কেন্দ্র করে সোমবার রাতেই ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের নির্দিষ্ট এলাকা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী নেতাকর্মীরা তাদের নিজস্ব এলাকায় মানবপ্রাচীর তৈরি করেছেন। গুলশান থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত রাস্তা জুড়েই ছিল বিপুল নেতাকর্মীর উপস্থিতি। নেতাকর্মীদের ঢলে বিমানবন্দরের উদ্দেশে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর কিছুক্ষণ পর পর থামতে হয়।
এ সময় গাড়ির আসন থেকেই নেতাকর্মীদের হাত নেড়ে বিদায় জানান বেগম খালেদা জিয়া। নেতাকর্মীদের ভিড় সামলে রাত ১০টা ৫০ মিনিটে বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেট দিয়ে গাড়ি প্রবেশ করে।
এবার লন্ডন সফরের মাধ্যমে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে সাত বছর পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার জ্যেষ্ঠ সন্তান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান ও নাতনি জায়মা রহমানসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে দেখা হবে। এর আগে চোখ ও পায়ের ফলোআপ চিকিৎসার জন্য ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মা-ছেলের দীর্ঘ কাঙ্ক্ষিত এই সাক্ষাতে বাংলাদেশ ও ভবিষ্যতের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। নেতাদের প্রত্যাশা, চিকিৎসা শেষে তিনি সুস্থ হয়ে সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালনের মাধ্যমে দ্রুত দেশে ফিরবেন।
৭৯ বছর বয়সি সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যাসহ নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন। ২০১৮ সালে একটি দুর্নীতির মামলায় কারাগারে সুস্থভাবে গেলেও সরকারের রোষানলে পড়ে দীর্ঘদিন বিনা চিকিৎসায় তার অসুস্থতা বাড়ে। দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, পায়ে হেঁটে কারাগারে গেলেও সরকারের ভয়াবহ মানসিক নির্যাতন ও বিনা চিকিৎসায় দু’বছর পর তিনি হুইলচেয়ার করে বাসায় ফেরেন। এর মধ্যে তিনি কয়েকবার জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে সাতবার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে আবেদন করলেও সাড়া দেয়নি সরকার।
পরে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে ৬ আগস্ট খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দি হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করে আদালত। এরপর পরই তার বিদেশযাত্রা নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করে তার মেডিকেল বোর্ড। বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, লন্ডন ক্লিনিকে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. প্যাট্রিক কেনেডির তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা হবে। ঢাকা থেকে তার সঙ্গে গেছেন অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। পুত্রবধূ সৈয়দা শামিলা রহমান এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা তার সঙ্গে রয়েছেন।
Leave a Reply