নড়াইলে ৪ আগস্টের নাশকতার মামলায় মো. শরিফুল মোল্লা নামে এক বিএনপি নেতাকে ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এরই প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে লোহাগড়া উপজেলার রামপুর বাসইসটান্ট নামক এলাকায় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
মো. শরিফুল মোল্লা নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার লক্ষীপাশা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে কাজ করে আসছি । আমার পরিবার ও বংশের সমস্ত লোকজন সহ । অথচ আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মান সম্মান ক্ষুন্ন করার জন্য মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং আমার নাম অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি করছি।”
তিনি আরও বলেন, “২০২১ সালেও লার্নিং কমিটিতে আমি ইউনিয়নেল বিএনপির সক্রিয় ওয়ার্ড সদস্য আছি ।এবং এখনও দলের জন্য কাজ করছি। কেন আমার নামে মামলা করা হলো, তা আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না। এটি একটি রাজনৈতিক হয়রানির উদাহরণ।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ৮ নং ওয়ার্ড পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শহিদুল মল্লিক।
বিএনপি নেতা শহিদুল মল্লিক বলেন, “মিথ্যা মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি করা এখন একটি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ আইনের প্রতি আস্থা হারাবে। আমরা এ ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।” এবং এই মামলার বাদী সমন্বয়ক বাবু একজন আওয়ামী লীগের পরিবারের সন্তান । তিনি ছাত্রলীগের একজন সদস্য হয়ে এখন সমন্বয়ক নাম ভাঙ্গিয়ে ।
বিএনপি’র নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে দলের ভাবভূর্তি নষ্ট করছেন ।
৫ নং লক্ষীপাশা ইউনিয়নের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বলেন, “এ ধরনের মিথ্যা মামলা দলের নেতাকর্মীদের মনোবল দুর্বল করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা সবাই শরিফুল মোল্লার পাশে আছি এবং তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি।” এবং শরিফুল মোল্লা আমার ৫ নং লক্ষীপাশা ইউনিয়নের এক নং ওয়ার্ডের রানিং ওয়ার্ড কমিটি সদস্য।
৫ নং লক্ষীপাশা ইউনিয়নের সিনিয়র সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম ( ছবি) ।তিনি জানান আমার রানিং কমিটির সদস্য মোঃ শরিফুল ইসলাম তিনি পূর্বে থেকেই তিনা পরিবারসহ বংশ পরম্পরা ভাবে বিএনপির সাথে একত্রিত হয়ে কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করে আসছেন । তার বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই মামলাটি থেকে তাহার নাম প্রত্যাহারের দাবি জানাই।
ইউনিয়ন বিএনপির ১ নং ওয়ার্ডের সভাপতি মোঃ আকবর হোসেন .তার বক্তব্যে বলেন, “মিথ্যা মামলাগুলো বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। এ ধরনের হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।”
১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইউনুস ঠাকুর বলেন, “আমাদের একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতার বিরুদ্ধে এ ধরনের মিথ্যা মামলা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই, মিথ্যা মামলাগুলো অবিলম্বে প্রত্যাহার করুন।”
সহ-সভাপতি মোঃ তবিবর সেখ বলেন, “এ ধরনের হয়রানিমূলক মামলা শুধু বিএনপি নয়, বরং সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার জন্যও হুমকিস্বরূপ। আমরা এই ধরনের অন্যায়ের প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা জানান, মিথ্যা মামলার শিকার হওয়া একটি গুরুতর অন্যায়। তারা বলেন, “এ ধরনের মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষ ও দলের কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।”
জানা যায়, শরিফুল মোল্লা জাতীয় দৈনিক সূর্যোদয় পত্রিকার নড়াইল জেলা প্রতিনিধি এবং তিনি একজন ব্যবসায়ী।
তিনি বলেন, “আমি সাংবাদিকতা ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কেন আমাকে এভাবে হয়রানিমূলক মামলায় জড়ানো হলো? তা আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না। আমি সবার সহযোগিতা কামনা করছি।”
এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে একত্রে মিথ্যা মামলার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, যেন মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে রাজনৈতিক হয়রানি বন্ধ করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার কর্মসূচি চলাকালে লোহাগড়ার সিএন্ডবি চৌরাস্তায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করে বেধড়ক মারপিট করে অভিযুক্তরা। বর্তমান নড়াইল জেলা সমন্বয়ক নেতা কাজী ইয়াজুর রহমানসহ আরও ১৩ জন শিক্ষার্থীকে রামদা, বাঁশের লাঠি, লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে। এ সময় শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছুড়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
মামলায় মাশরাফি ও তার বাবা ছাড়াও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নড়াইল জেলা সভাপতি নাঈম ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক স্বপ্নীল শিকদার নীল, লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্সী আলাউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র সৈয়দ মশিয়ূর রহমান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শিকদার আব্দুল হান্নান রুনু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফয়জুল হক রোম, সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফয়জুল আমীর লিটু, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের ২৯৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৩০০ জনেরও বেশি।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নড়াইল সদর থানা ও লোহাগড়া থানায় নড়াইল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় একাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
Leave a Reply