Dainik Sotter Kontho - দৈনিক সত্যের কণ্ঠ
ঢাকাThursday , 15 June 2023
  • অন্যান্য

নওগাঁয় খাস জমি অবৈধ দখল ও প্রতারনার অভিযোগ

নওগাঁ প্রতিনিধিঃ
June 15, 2023 1:51 am । ১০৩ জন

Google News

জমি বিক্রির নাম করে প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারনা ও খাস জমি অবৈধভাবে দখলের অভিযোগ উঠেছে নওগাঁ সদর উপজেলার চকবিরাম গ্রামের আজিজুল হক ও আব্দুল মান্নান নামে দুই সহোদরের বিরুদ্ধে ।

অবৈধ দখলদারদের মারমুখি আচরনের কারনে বাধ্য হয়ে খাস জমি উদ্ধার করতে পারেনি উপজেলা সহকারী কমিশনার( ভূমি) রফিকুল ইসলাম ।

এদিকে প্রতারনার শিকার নওগাঁ মডেল টাউন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মো আব্দুল কুদ্দুস প্রতিকার চেয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরের একটি রেষ্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে ওই সহোদর ভাইয়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ
করেছেন ।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, নওগাঁ শহরের চকপাথুরিয়া ও চকবিরাম মৌজায় কিছু নিচু জমি নিয়ে ২০১৬ সাল থেকে আধুনিক মানের আবাসন গড়ে তোলার কাজ করছে নওগাঁ মডেল টাউন । ইতোমধ্যেই ৭৫টি প্লটে মাটি ভরাট ও উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে । ৬৮ টি প্লট বিক্রি হয়েছে । কয়েক জন বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন ।

প্রকল্পের দক্ষিণ প্রান্তে বাস টার্মিনাল ও নওগাঁ — মহাদেবপুর সড়কের সংঙ্গে আবাসনে চলাচলের জন্য ৪০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা সংযুক্ত আছে । কিন্তু ২০১৭ সালে চকবিরাম মহল্লার আজিজুল হক ও তার ভাই আব্দুল মান্নান সেই রাস্তার মালিকানা দাবি করেন । পরবতীর্তে তারা জমির ৮০ খতিয়ানের ২৮৪ দাগের কাগজমূলে প্রকল্পের রাস্তা বরাবররে তাদের জমি রয়েছে বলে তারা দাবি করেন ।

দাবির প্রেক্ষিতে প্রায় ৬ বছর আগে ২ কাঠা জমি বিক্রির শর্তে একটি চুক্তিনামার মাধ্যমে ২৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা তারা গ্রহন করেন । কিন্তু প্রায় ৬ বছর অতিবাহিত হলেও উক্ত জমি রেজিষ্ট্রী করে দেন নাই তারা । এখন টাকা ফেরত চাইতে গেলে বিভিন্ন ওজর — আপত্তি, তালবাহানা ও কালক্ষেপনসহ প্রতারণার আশ্রয় নেয় আজিজুল ও আব্দুল মান্নান । তারা একাধিকবার মধ্যরাতে মডেল টাউনের প্রবেশ পথে অবৈধভাবে ইটের প্রাচীর নির্মাণ করার চেষ্টা করে প্রকল্পের সুনাম ক্ষুন্ন করার অপতৎপরতা চালায় । টাকা ফেরত না দিয়ে সামাজিকভাবে হেয় করার মানসে দুষ্কৃতকারীদের ছত্রছায়ায় তারা নানা তৎপরতা চালায় বলে অভিযোগ করেন তিনি । খাস জমি দখলকারী ও প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি করেন তিনি ।

 

তিনি বলেন, পরবর্তিতে জমির কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জানতে পারি যে, চুক্তিনামা অনুযায়ী জমির ৮০ নম্বর খতিয়ানের ২৮৪ নম্বর দাগের দালিলিক
কাগজপত্র মূলে তাদের দাবিকৃত ২ কাঠা জমির কোন মালিকানা নেই । যৎসামান্য জমি যা ছিল সেটাও ভূমি অফিস ইতোমধ্যেই তার খারিজ বাতিল করেছেন ।

এছাড়া ২০২২ সালের শেষের দিকে আমরা জানতে পারি যে, উক্ত ২৮৪ নং দাগে সরকারের ১৪ শতক খাস সম্পত্তি রয়েছে । সেই জমি বেআইনীভাবে দখলে নিয়ে আজিজুল ও মান্নান নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে । বর্তমান বিষয়টি জানাজানি হলে নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে তারা নওগাঁ মডেল টাউন প্রকল্পের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার ছড়াচ্ছে । এমতাবস্থায় তাদের কাছ থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা উদ্ধারে আমি দিশেহারা ।

এদিকে এলাকাবাসীর মধ্যে আব্দুল হান্নান, আশরাফুল ইসলাম স্বপন ও শেরেকুল ইসলাম জানান ওই দাগের জমির কাগজে মাত্র ১৮ শতক জমি উল্লেখ রয়েছে । পরবতীর্তে জমি মাপতে গিয়ে একই দাগে আরো ১৪ শতক জমি বেশী হয় । এই অতিরিক্ত ১৪শতক জমি খাস করা হয়েছে । আবার ওই দাগে মাত্র সোয়া(১.২৫) শতক জমির মালিক চকবিরাম গ্রামের আজিজুল ও আব্দুল মান্নান । বর্তমানে সেই জমিরও খারিজ বাতিল করা হয়েছে ।

তারা বলেন, দাগে বিদ্যমান ১৮ শতক জমিতে মামলা বা অভিযোগ থাকলেও উক্ত দাগের খাসভুক্ত ১৪ শতক জমি নিয়ে কারো কোন অভিযোগ নেই ।

গত ২৩ মে নওগাঁ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার( ভূমি) রফিকুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট দাগের অন্যান্য মালিকদের ধারাবাহিক নোটিসের মাধ্যমে খাসভুক্ত ১৪ শতক জমি উদ্ধার করতে ঘটনাস্থলে গেলে অবৈধ দখলকারী আজিজুল ও মান্নানের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী বিশৃংখলার সৃষ্টি করে এ্যাসি ল্যান্ডের উপর চড়াও হয় । বাধ্য হয়ে এ্যাসি ল্যান্ড জমি উদ্ধার না করেই ফিরে যান ।

এ বিষয়ে মো আজিজুল ইসলাম বলেন, ক্রয় সূত্রে আমরা ওই জমি ভোগ দখল করে আসছি । কোন খাস জমি আমরা দখল করছি না । জমির খারিজ সংক্রান্ত জটিলতা ও পারিবারিক সম্পত্তির বিষয়ে বাটোয়ারা মামলা থাকায় চুক্তিপত্র অনুযায়ী ক্রেতাকে জমি রেজিষ্ট্রী করে দিতে পারছি না ।

এবিষয়ে নওগাঁ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার( ভূমি) রফিকুল ইসলাম বলেন ৮০ নম্বর খতিয়ানের ২৮৪ দাগে ১৮ শতক জমি উল্লেখ রয়েছে । কিন্তু বাস্তবে সেখানে জমি রয়েছে ৩২ শতক । এই ৩২ শতকের মধ্যে ১৪ শতক জমি খাস খতিয়ানভুক্ত । এই অবস্থায় গত ২৩ মে জমি উদ্ধার করতে গিয়ে অবৈধ দখলকারীদের মারমুখী আচরনের কারনে বাধ্য হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে । এছাড়া এসব জমি নিয়ে ওই এলাকায় একাধিক মামলা চলমান রয়েছে এবং ১৯টি দলিল সৃজন করা হয়েছে । ওইসব দলিলের ইতিমধ্যেই খারিজ বাতিল করা
হয়েছে এবং দলিল বাতিলের কার্যক্রম চলমান রয়েছে ।