বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কূটনীতিক হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করেন নূর চৌধুরী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি এস এইচ এম বি নূর চৌধুরীকে নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করেছে কানাডিয়ান রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিবিসি । এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে দেখা মিলল আত্মগোপনে থাকা নূর চৌধুরীর ।
শনিবার( ১৮ নভেম্বর) সকালে সিবিসি টেলিভিশিনের জনপ্রিয় অনুসন্ধানী বিভাগ “ দ্য ফিফথ স্টেট ”- এ “ দ্য অ্যাসাসিন নেক্সট ডোর ” শিরোনামের প্রতিবেদনটি প্রচারিত হয় ।
প্রতিবেদনে নূর চৌধুরীর কানাডায় পালিয়ে যাওয়া, ২৭ বছর সেখানে থেকে যাওয়া এবং খুনের অভিযোগে হওয়া শাস্তি বাস্তবায়নে তাকে বাংলাদেশের ফেরত চাওয়ার বিষয়গুলো উঠে এসেছে ।
প্রতিবেদনে টরন্টোর নিজ ফ্লাটের ব্যালকনিতে এবং গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা অবস্থায় নূর চৌধুরীকে দেখানো হয় । তবে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা না বলে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে কেটে পড়েন তিনি ।
নূর চৌধুরী কোথায় আছেন, কী করছেন, এ নিয়ে তথ্য আকারে তেমন কিছু সামনে আসেনি আগে । তার অবস্থান নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরির প্রচেষ্টা ছিল । ধারণা করা হচ্ছে, এই রিপোর্ট প্রচারের মধ্য দিয়ে সেই ধোঁয়াশা কেটে যাবে এবং কানাডিয়ান সাধারণ জনগণ ভয়ানক এই খুনি সম্পর্কে পরিষ্কার একটি ধারণা পাবে ।
প্রতিবেদনে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার বলেন, “ এই একটি ইস্যু বাদে কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ । কেবল বাংলাদেশি হাইকমিশনার হিসেবে নয়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি চাই তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হোক । ”
বঙ্গবন্ধুকে নিজ হাতে গুলি করে হত্যার পর কূটনীতিক হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করেন নূর চৌধুরী । ১৯৯৬ সালে আওযামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে তিনি পালিয়ে প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে এবং পরে কানাডায় ঢোকেন দর্শনার্থী হিসেবে । ১৯৯৯ সালে শরণার্থী হিসেবে থেকে যাওয়ার আবেদন করলেও কানাডা সরকার তা নাকচ করে দেয় । আপিল করেও হেরে যান নূর চৌধুরী । ২০০৯ সালে কানাডা থেকে নূরকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন কানাডিয়ান সর্বোচ্চ আদালত । কিন্তু বাংলাদেশে পাঠালে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে — এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে ২০১০ সালের দিকে সরকারের কাছে “ প্রি রিমুভাল রিস্ক এসেসমেন্ট ” র আবেদন করেন নূর চৌধুরী । যেহেতু কানাডা মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে না, সেহেতু এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রায় ১৪ বছর ধরে সেখানে মুক্ত জীবনযাপন করছেন তিনি ।
২০২২ সালের নভেম্বরে সচিবালয়ে আসেন কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস । সাক্ষাতের পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানান, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে । তবে কানাডার আইনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ফেরত দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান হাইকমিশনার ।