Dainik Sotter Kontho - দৈনিক সত্যের কণ্ঠ
ঢাকাSaturday , 9 December 2023
  • অন্যান্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কয়রায় বিলুপ্তির পথে খেজুর গাছ ও গাছিরা

কয়রা (খুলনা) সংবাদদাতা
December 9, 2023 12:31 pm । ৫৮ জন

Google News

শহরায়নের আগ্রাসনে প্রকৃতির ঐতিহ্য খেজুর গাছ ও গাছিরা দক্ষিণ অঞ্চল কয়রায় বিলুপ্তির পথে। খেজুরের রস দিনে দিনে কমে যাচ্ছে।শীতের আগমনের শুরুতেই গ্রামীণ সংস্কৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয় খেজুর গাছ হতে রস সংগ্রহের ধুম। গ্রামীণ জনপদের ঘরে ঘরে খেজুর রসের সমারোহ। গ্রামে এখন শহুরে ছোঁয়া।দিন যত যাচ্ছে খেজুর গাছও তত কমছে। খেজুর গাছের রস ও গুড় আমাদের সংস্কৃতির একটি বিশেষ অংশ। শীতের সকালে খেজুরের রস, রসের পিঠা, গুড়-মুড়ি আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য।

কয়রা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামের আঁকা-বাঁকা রাস্তায় গত কয়েক বছর আগেও শত শত খেজুর গাছ ছিল। ওই সব গাছ থেকে শীতকালে যত খেজুরের রস সংগ্রহ হতো তা দিয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে তৈরি হতো খেজুরের গুড়, যা এখন আর চোখে মিলছে না। ফলে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে নকল গুড়ে। এখন এসব গুড়েই তৈরি হচ্ছে পিঠা-পুলিসহ অন্যান্য মিষ্টান্ন। গাছি সংকট, অবহেলা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও নগরায়ণের প্রতিযোগিতায় ক্রমেই এখানে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ।

 

শীতে খেজুরের রসের সঙ্গে গ্রামবাংলার প্রতিটি মানুষের সম্পর্ক বেশ পুরনো ও নিবিড়। তবে নানা কারণে গাছের রসের স্বাদ ভুলতে বসেছেন মানুষ। বর্তমানে ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে খেজুরের গাছ ব্যবহার ও গাছি সংকটে তেমনভাবে আর রস সংগ্রহ করা হয় না। ফলে হারাতে বসেছে এক সময়ের রস সংগ্রহের ঐতিহ্যে। নারায়নপুরের গাছি দাউদ জানান, খেজুরের গাছ কমে যাওয়ায় তাদের চাহিদাও কমে গেছে। আগে এই কাজ করে ভালোভাবেই সংসার চালাতেন। এমনকি আগে যে আয় রোজগার হতো তাতে সঞ্চয়ও থাকতো, যা দিয়ে বছরের আরো কয়েক মাস সংসারের খরচ চলতো। এখন গ্রামে যে কয়েকটা খেজুর গাছ আছে তা বুড়ো হয়ে যাওয়ায় রস তেমন পাওয়া যায় না। রস বাজারে বিক্রির মতো আগের সেই অবস্থা নেই। তিনি আরো বলেন, কয়েক বছর আগে এক হাড়ি খেজুর রস বিক্রি করতাম ২০ টাকা। এখন খেজুর গাছ না থাকায় সে রসের দাম বেড়ে হয়েছে ২০০ টাকা।

বাগালী ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি লুৎফর সানা বলেন, আগে প্রায় প্রতিটি গৃহস্থ বাড়িতে অন্তত ১০ থেকে ১৫টি বা আরও বেশি খেজুর গাছ ছিল, যা প্রায় বিলুপ্ত। আমাদের গ্রামে অন্তত ৫০০টি খেজুর গাছ ছিল। এখন বাড়ি/ঘর হয়ে যাওয়ায় খেজুর গাছ আর নেই। আগে অনেক গাছও ছিল, গাছিও ছিল। এখন গাছ ও গাছি কোনোটাই নেই। মাষ্টার খায়রুল বাসার জানান,খেজুর গাছ বাণিজ্যিক ভাবে রোপন করাতে কৃষকদের উৎসাহিত করতে হবে। বর্তমানে গাছির সংখ্যাও কমে এসেছে। এজন্য গাছি তৈরিতে মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে খেজুরের রস, গুড়ের বিষয়ে যেন কেবল পুস্তকে না পড়তে হয় সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে আমাদের।তা না হলে শত বছরের এই ঐতিহ্য ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে।