বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, একটা সরকার আমাদের দেশে ছিল, তারা আমাদের সিঙ্গাপুর উপহার দিয়েছিল। এই আমাদের রাজনগরের সিঙ্গাপুর। প্রত্যেক বছর নদী শাসনের জন্য বাজেট বরাদ্দ হয়। কিন্তু এটাকে সুষ্ঠুভাবে কাজে না লাগিয়ে লুটপাট করা হয়। লুটপাটের কুফল, যন্ত্রণা জনগণকে ভোগ করতে হচ্ছে। এখন তারা পালাতে গিয়ে বস্তা নিয়ে যায়। এখন বন্যার স্রোতে মাছ ভাসতেছে, ওরাও এখন খালেবিলে ভাসতেছে। জনগণ সেখান থেকে তাদের ধরছে।
শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কলেজ পয়েন্টে বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে ফুডপ্যাক উপহার দেয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, ‘বাংলাদেশকে উন্নয়নের রাজপথে তুলে এনেছেন, আপনারা কানাডা ও সিঙ্গাপুর বানিয়েছেন। আমাদের ইতিহাস জ্ঞানে তো কখনও দেখি নাই, কানাডা ও সিঙ্গাপুর বানিয়ে এইভাবে কোনো শাসক ও দোসরদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়। আপনারা পালাবেন কেন। আমাদের নেতাদের আপনারা হত্যা করেছেন, আমাদের কোনো নেতা দেশ ছেড়ে পালাননি। এটি আমাদের বাবা দাদাদের দেশ। আমাদের কোনো খালা-মাসির দেশ নেই। বাংলাদেশ আমাদের জন্ম মৃত্যুর চিরস্থায়ী ঠিকানা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ থেকে কয়েকদিন আগে বাংলাদেশে বিরাট একটি পরিবর্তন এসেছে। সাড়ে ১৭ বছর জাতির ঘাড়ে দুর্বোহ বোঝা চাপিয়ে রাখা হয়েছিল। প্রথম দুই বছর আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল মঈন ফখরুদ্দিন সরকার, তারপরের পনেরো বছর সরাসরি তারা নিজে। এ সাড়ে পনেরো বছরে জাতির কোমর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী ক্ষমতায় আসার পর প্রথম আঘাত হেনেছে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ওপর। পিলখানায় বিডিআরের সদর দপ্তরে নারকীয় হত্যাকাণ্ড করা হয়। সেখানে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক চৌকস সামরিক অফিসারকে হত্যা করা হয়। তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবন হরণ করা হয়। তাদেরকে হত্যা করে ড্রেনে ভাসিয়ে দেয়া হয়। মর্মান্তিক এই দৃশ্যের কষ্ট জাতি বয়ে বেড়াচ্ছে। এরপরের আঘাতটাই আসে জামায়াতে ইসলামীর ওপর। ঠিক যেভাবে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হত্যা করা হয়েছিল তেমনি বিচারের নামে জামায়াতের নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। আমাদের হাজার হাজার সহকর্মীকে পঙ্গু করা হয়েছে। দুইএকজনের জীবন্ত দেহ থেকে চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে।’
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘বৃহত্তর নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ফেনী ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। ভারতও সব পানি ছেড়ে দিয়েছে, ভাসিয়ে দেয়ার জন্য। আমরা ৫৩ বছর ধরে শুনে আসছি, ভারত আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু। এবার তারা পানি ছাড়ল কিন্তু আমাদেরকে বললও না, আমরা বাধ্য হয়ে পানি ছাড়ছি, আপনার একটু সতর্কতা অবলম্বন করুন। এটা কিন্তু প্রতিবেশীর শিষ্টাচার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইন হাতে নিয়ে কেউ আওয়ামী লীগ যে জঘন্য কাজ করেছে, আপনারা তা করবেন না। কারো বাড়ি ঘর সম্পদ নষ্ট করবেন না। এক জালেম বিদায় হয়েছে আরেক জালেম যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে। তিনি যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছেন আমাদেরকে নির্মূল করার জন্য, সেই ট্রাইব্যুনালে আল্লাহ চাইলে তাদেরকেই উঠতে হবে।’
পথসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মো. ফখরুল ইসলাম, সিলেট দক্ষিণ জেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল হান্নান, আঞ্চলিক টিম সদস্য ও সাবেক জেলা আমীর মো. আবদুল মান্নান, জেলা আমীর ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহেদ আলী, জেলা সেক্রেটারি মো. ইয়ামীর আলী, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মো. আলা উদ্দিন শাহ।
রাজনগর উপজেলা আমীর আবু রাইয়ান শাহীনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মিছবাউল হাসানের পরিচালনায় কলেজ পয়েন্ট সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠিত পথসভায় আরো বক্তব্য রাখেন জেলা কর্মপরিষদ সদস্য সৈয়দ তারেকুল হামিদ, মৌলভীবাজার পৌর আমীর হাফেজ তাজুল ইসলাম, সদর উপজেলা আমীর মো. ফখরুল ইসলাম, ছাত্রশিবির শহর সভাপতি তারেক আজিজ, জেলা সভাপতি হাফেজ আলম হোসাইন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন জেলা সহ-সভাপতি মাওলানা আহমেদ ফারুক, পৌর সেক্রেটারি আনোয়ার হোসেন চৌধুরী মুর্শেদ, সদর উপজেলা সেক্রেটারি দেওয়ান আশিক আল রশীদ চৌধুরী, ছাত্রশিবির শহর সেক্রেটারি মাসুদ রানা তুহিন, জেলা সেক্রেটারি নিজাম উদ্দিন, রাজনগর উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ মোঃ শাহাব উদ্দিন, রাজনগর সদর ইউনিয়ন আমীর দেলোয়ার হোসেন বাবলু, টেংরা ইউনিয়ন সভাপতি মাহমুদুর রহমান প্রমুখ।
আমীরে জামায়াত প্রতি প্যাকেট ১৫ কেজি করে রাজনগর, কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচশো মানুষকে ফুড প্যাকেট উপহার দেয়া হয়।